বালিয়াকান্দির সমন্বিত প্রমিলা মুক্তি প্রচেষ্টার সম্পাদিকা নাছিমা বেগমকে ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান
রাজবাড়ী প্রতিনিধি ঃ “ তোমরাই বাংলাদেশের বাতিঘর” আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর হতে ১০ ডিসেম্বর-২০১৯) এবং বেগম রোকেয়া দিবস ( ৯ডিসেম্বর-২০১৯) উপলক্ষে জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের ( সফল নারী) সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।
গত ২৮ জানুয়ারী ঢাকা সেগুনবাগিচা জাতীয় নাট্যশালা (মূল মিলনায়তন) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের (সফল নারী) সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের আয়োজনে এ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সেচ্ছাসেবী সংগঠন সমন্বিত প্রমিলা মুক্তি প্রচেষ্টার সম্পাদিকা নাছিমা বেগমকে শ্রেষ্ঠ জয়িতার ক্রেস্ট, সনদ প্রদান করা হয়।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি ছিলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা,এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী রওশন আক্তার। এছাড়াও ঢাকা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন ও আইসিটি) ও যুগ্ন সচিব খান মোঃ নুরুল আমিন, ঢাকা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফাতেমা জহুরা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিভাগের জয়িতাদের ক্রেস্ট, চেক ও সম্মাননা সনদ বিতরণ করা হয়।
সমন্বিত প্রমিলা মুক্তি প্রচেষ্টার সম্পাদিকা নাছিমা বেগম এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি স্বামীর সংসারে ঘানি টানতে টানতে এক সময়ে মনে হলো, অসহায় মানুষের জন্য কিছু একটা করা প্রয়োজন। সংসার জীবনে এসে কাজের অবসরে কাজ করবো বলে মনে আশা জাগে তারই প্রেক্ষিতে আমার স্বামীর সাথে আলাপ করে ১৯৯৮ সালের ১০ জানুয়ারী সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিষ্ঠিত করি “ সমন্বিত প্রমিলা মুক্তি প্রচেষ্টা” নাম সামাজিক সংগঠন। সংগঠনটি সরকারী ভাবে ২০১৯ সালের ২০ আগষ্ট মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধনকৃত হয়। ( যার রেজিঃ নং মবিঅ-রাজ-রেজি-২৪, তারিখ-২০-০৮-২০০০ইং)। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সবিতা রানী চন্দের সহযোগিতায় পিছিয়ে পড়া অবহেলিত অসহায় ও দুঃস্থ নারীদের নিয়ে কাজ শুরু করি। অসহায় নারীদের সঞ্চয় বৃদ্ধির লক্ষে তাদের নিয়ে মিটিং করি ও সকলের মতামতের ভিত্তিতে গড়ে তুলি মহিলা শাপলা দল। যেখানে প্রায় ৪০জন মহিলা তাদের সঞ্চয়িত অর্থ গচ্ছিল করে সমাজ সংসারে তারা সচ্ছলতার পথ দেখে। সরকারী ভাবে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক সংস্থাটি ২০০০ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি প্রকল্প বরাদ্দ পায়। যেখানে সমাজের অবহেলিত অসহায়, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা মহিলারা ৫০জন কর্মসংস্থানের লক্ষে ১ বছর ব্যাপী সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। অপুষ্টিভুক্ত শিশুদের পুষ্টি ভিত্তিক খাদ্য প্রদান করা হয়। সমাজের অবহেলিত, লাঞ্ছিত মহিলারা কাজ করে সংসার চালিয়ে তারা নিজের পায়ে দাড়িয়েছে। কোন এক সময় সমাজের অনেকের চোঁখেই বড়ই তিরস্কার মুলক কথাবার্তা শুনতে হয়েছে। যারা তিরস্কার করেছিল, তারা যখন বুঝতে পারলো সমাজের জন্য একটা ভালো পদক্ষেপ, তখন সকলেই অভিনন্দন জানায় আমাকে সহ সংগঠনের সকলকে। এভাবে কর্মকান্ড নিয়ে চলতে থাকি। ২০০৩ সালে ব্র্যাকের অর্থায়নে ঝড়েপড়া শিশুদের উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসুচির প্রকল্প বরাদ্দ পাই। তখন থেকেই এলাকাতে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করি। মানুষের চোঁখে তখন অনেক আশার আলো। মাঝে মধ্যে এলাকা ভিত্তিক বাল্য বিবাহ, যৌতুক রোধে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সচেতনতা সভা করাসহ উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকি। বর্তমান সংস্থার পরিচালনায় ৫২টি উপ-আনুষ্ঠানিক স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও সমাজের অবহেলিত অসহায় জন্মগত ঠোট কাটা, তালুফাটা রোগী, যারা টাকা পয়সার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বিনামুল্যে অপারেশনের সকল ব্যবস্থা করার কাজ অব্যাহত আছে। এ পর্যন্ত ১১৫০জন রোগীকে প্লাস্টিক সার্জারীর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ২০০৫ সাল থেকে সমাজের অবহেলিত পিছিয়ে পড়া, প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ, আয়বর্ধক সামগ্রী ও উপকরণ বিতরণ কর্মসুচি চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত ৪২৫জন প্রতিবন্ধি ও অসহায় নারীদের বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। গরীব, অসহায় মানুষের চোঁখের আলো ফিরিয়ে আনতে বিনামুল্যে চোঁখের ছানি অপারেশন কর্মসুচি চলমান রয়েছে। আগামীতে সংস্থাটি আরো সাফল্যে বয়ে আনবে বলে আশাবাদ পোশন করি।